লালন সরকার, দেবীগঞ্জ
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্রদের অফিসে ডেকে নিয়ে মামলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এই সংক্রান্ত একটি অডিও ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি সামনে আসে। অডিওতে যে ছাত্রদের কথা শোনা যাচ্ছিল তারা শেখ রেয়াজিয়া দাখিল মাদ্রাসায় বর্তমানে অধ্যয়নরত। মাদ্রাসাটির সুপারিন্টেন্ডেন্ট সাইফুল ইসলামের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ বেশ পুরনো। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সুপারের এই অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে পৌরশহরের বিজয়চত্বর সংলগ্ন এশিয়ান হাইওয়েতে মাদ্রাসাটির শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ জমা দেন। পরে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামকে অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তুরাব হোসেন।
গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর ) অভিযোগের প্রেক্ষিতে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে ছাত্রদের একটি প্রতিনিধি দল সেনা ক্যাম্পে এসেছিলেন। পরে ক্যাম্প কমান্ডার ব্যস্ত থাকায় সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হান্নান এর সাথে কথা হয় তাদের। পরে তিনি তদন্তের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে ছাত্রদের মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দেন। ছাত্ররা সে অনুযায়ী শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের সাথে দেখা করেন।
শিক্ষার্থীরা সেখানে গেলে উল্টো শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম তাদের মামলার ভয় দেখান। অডিওতে সাইফুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, ‘দলেবলে মিছিল করে তুমি যেখানেই যাও না কেন আমি আইনশৃঙ্খলা বিরোধী কাজে তোমাকে জড়ায় দিব। তুমি কি করবা। এখানে ৫০ জন আসো, বলবো যে আমার অফিসে হামলা করতে আসছে। প্রতিটা অফিসে ১৪৪ ধারা জারি করা আছে। কর্মকর্তা ছাড়া কেউ অফিসে প্রবেশ করতে পারবে না। আমি বলবো আইনশৃঙ্খলা বিরোধী কাজে তারা লিপ্ত। কোথায় যাবা? তোমার একটা মামলা হবে। তুমি সারা জীবনের জন্য চাকরি পাবা না।’
জমি বন্ধকের অর্থ লোপাটের অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অডিওতে বলতে শোনা যায়, ‘জমি সরকারি, ওনারা যদি মাদ্রাসা পুরাটা লিজ দিয়ে দেয় সেই হিসেব দেখার দায়িত্ব তোমাদের না। ওই যে কালীগঞ্জ স্কুল গিয়ে দেখো। ১৬০ টা দোকান ভাড়া দেয়। ১৫ বিঘা জমি হলো পুকুর। প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকার ইনকাম। ছাত্ররা আন্দোলন করে? এগুলো দেখার দায়িত্ব কমিটির। কমিটি দেখবে। জমির উদ্দিনের এই পাশে যতগুলো দোকান আছে, ওই পাশে রাস্তার পাশে যতগুলো দোকান সব তাদের। কই জমিরউদ্দীন মাদ্রাসার বিরুদ্ধেতো একটা অভিযোগ আসেনি।’
এই সময় এক ছাত্র বলেন, উনি (সুপার) দোষ করছেন জন্য অভিযোগ দিয়েছি। এই সময় শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তেজিত হয়ে বলেন, দোষ করছে তা দেখার জন্য কমিটি আছে। তারা দেখবে, তোমরা দেখার কে।
অডিওতে শিক্ষা কর্মকর্তাকে আরো বলতে শোনা যায়, তোমরা দুই একজন এসে অভিযোগ দিতে পারো। তাই বলে দল বেঁধে এসে স্মারকলিপি দেওয়া মানববন্ধন করা এটা একই জিনিস না। আর জমি জায়গার হিসাব নেওয়া এটা তোমাদের কাজ না। এটা কমিটির কাজ।
এরপর পাঠাদানের বিষয়ে একজন ছাত্র বলেন, আমি ক্লাস সিক্স থেকে পড়ছি। কোন দিন উনি (সুপার) ক্লাস নেননি।
এমন কথার প্রেক্ষিতে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, তুমি প্রধান শিক্ষককে বাধ্য করার কে? ওনার ডিউটি পালন করবে কিনা সেটা আমি দেখবো। তোমরা দুই তিনজন এসে আমাকে বা ইউএনও স্যারকে অভিযোগ দিয়ে যেতে। এই সময় ছাত্ররা বলেন, আমরা ওনাকে বাধ্য করিনি।
সেদিনের সেই প্রতিনিধি দলের শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা সেদিনের পর থেকে আতঙ্কে আছি। মাদ্রাসা আমাদের, আমরা জানি কিভাবে আমাদের মাদ্রাসাকে ভোগের বস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। কমিটি ও শিক্ষা অফিসের প্রশ্রয়ে দিনের পর দিন অনিয়ম চলে আসছে। এখন যখন আমরা আমাদের দাবিদাওয়া আদায়ে কর্মসূচি পালন করে আসছি তখন এভাবে মিথ্যা মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের মামলার হুমকি দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, আমি কোন মামলার হুমকি দেই নি। অভিযোগের তদন্তের জন্য ১০ দিন সময় দেয়া হয়েছিল। আমি আজকে এবিষয়ে চিঠি পাঠাবো।
এই বিষয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তুরাব হোসেন বলেন, আমি এই বিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ পাই নি। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের মামলার হুমকি দিতে পারেন না। তাকে নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হলে আমি তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে দিবো এবং তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এবিষয়ে অবগত করবো।
এবিষয়ে পঞ্চগড় জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল মালেকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব মিথ্যা কথা। একজন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসব বলতে পারেন না।
রেকর্ডিং না শুনেই কীভাবে বুঝলেন এটা মিথ্যা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি এখন ব্যস্ত আছি, মুঠোফোনে বক্তব্য দিতে পারবো না। এই বলে কল কেটে দেন তিনি।
এম/এস
Leave a Reply