রফিকুল ইসলাম তুষার:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর প্রতিষ্ঠাতা বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, স্বনির্ভর বাংলাদেশের রুপকার মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে সুজানগরে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সুজানগরে বিএনপি উদ্যোগে শুক্রবার (৩০মে২০২৫) বিকেলে জিয়া স্মৃতি পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
সুজানগর উপজেলা বিএনপির সাবেক ক্রিয়া বিষায়ক সম্পাদক মজিবর রহমান খানের সভাপতিত্বে ও উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আব্দুল মান্নান মোল্লার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক ৬৯ পাবনা-২ এর মনোনয়ন প্রত্যাশী জননেতা আব্দুল হালিম সাজ্জাদ এসময় অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারন সম্পাদক বাবু মোল্লা, উপজেলা যুবদলের সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নবী মোল্লা, মধু বিশ্বাস, ইউসুব আলী টোকন, যুবনেতা আরিফ বিশ্বাস, পৌর যুবদলের সদস্য মানিক খান, আনোয়ার হোসেন আনাই,স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন আহব্বায়ক শফিকুল ইসলাম, ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি রুহুল খান, পাবনা জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ন আহব্বায়ক আলম মন্ডল ও এন,এ কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি শাকিল খান প্রমুখ।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য কালে জননেতা আব্দুল হালিম সাজ্জাদ বলেন শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক আদর্শ এবং দেশের প্রতি তাঁর অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, যে কোনো দেশের ইতিহাসে এমন এক সময় আসে যখনকার ঘটনাবলী অন্যান্য ঘটনাকে মনে করে দেয়। এমন ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটে যিনি জাতির চলার পথে গতি সঞ্চার করেন, নতুন দিক-নির্দেশনা দেন, উদ্বুদ্ধ করেন আত্ম-অনুসন্ধানে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তেমনই এক ব্যক্তিত্ব। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী জিয়াউর রহমান বগুড়ার গাবতলী থানার বাগবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি।
জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রের প্রাণপুরুষ। আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি। তার ছিল সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি। তিনি ছিলেন ভিশনারি, এক স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনিই জাতিকে একটি সত্যিকার গণতন্ত্রের শক্তভিত্তির ওপরে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। আনতে চেয়েছিলেন অর্থনৈতিক মুক্তি। দিতে চেয়েছিলেন জাতিকে সম্মান আর গৌরব।
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক। নানা কারণে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে স্থান করে নিয়েছেন। তার সততা, নিষ্ঠা, গভীর দেশপ্রেম, পরিশ্রমপ্রিয়তা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা প্রভৃতি গুণাবলী এ দেশের গণমানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। তিনি ছিলেন একজন পেশাদার সৈনিক। তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের কাছে তার যে গ্রহণযোগ্যতা ছিল অন্য কোনো রাষ্ট্রনায়কের ভাগ্যে তা জোটেনি।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ জনগণ যখন চরম ভীতি ও হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল তেমন এক কঠিন সময়ে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। জিয়াউর রহমান ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও আশান্বিত করে তুলেছিলেন। তিনি শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ক্ষান্ত হননি। একইসাথে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধের নেতৃত্বও দিয়েছেন। অবশেষে দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছিলাম স্বাধীনতা। পেয়েছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশ।
শহীদ জিয়ার সবচেয়ে বড় সৃষ্টি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদের রাজনীতি, বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল (বিএনপি) গঠন করা। তিনি বিশ্বাস করতেন এবং বলতেন, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ’। দেশপ্রেম সবার ঊর্ধ্বে, তার হৃদয়ে সারাক্ষণ বাজত সেই সুর ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ।’ স্বাধীনতা ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধ থেকে ৩০ মে ১৯৮১ শাহাদত বরণ পর্যন্ত মাত্র ১০ বছর তাঁর কর্মময় জীবনে উৎপাদন, উন্নয়নে জাদুর পরশ লেগে আছে।
জিয়া জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়ে একটি বড় রকমের ঝাঁকুনি দিয়ে গেছেন। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, নারী, শিশু সবকিছুতেই একটা বিপ্লব ঘটিয়ে গেছেন। গোটা জাতিকে তিনি ’৭১’র মতো একতাবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। একটি দৃঢ় জাতীয় সংহতি সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। পরিচয়-সংকটে আক্রান্ত হীনম্মন্যতায় ভোগা জাতিকে তার সত্যিকারের পরিচয় এবং তার আপন স্বাধীন স্বকীয়তার পরিচিতি তিনি উন্মোচন করতে পেরেছিলেন। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সংমিশ্রণে হাজার বছরের যে রসায়ন, তারই আবিষ্কার তিনি করেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ।
পরে শহীদ জিয়ার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
Leave a Reply