মুহাম্মদ তাফাজ্জুলুল হক ফয়জী স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, আজকে একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন পরিবেশে রমজানুল মোবারক উৎযাপন করছি। দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে স্বদেশে পরবাসীর মত আমাদের জীবন যাপন করতে হয়েছে। মুক্ত অবস্থায়ও বন্দীত্বের অভিশাপ নিয়ে আমাদের চলাফেরা করতে হয়েছে। অসংখ্য অগণিত রাজনৈতিক নেতা কর্মী গুম খুন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। অনেককে দিনের পর দিন মাসের পর মাস ফেরারি জীবন যাপন করতে হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে, রাজনীতি করা কতটা অপরাধ। শুধু রাজনীতি করার অপরাধে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শুকরিয়া আদায় করছি যিনি ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশের বুকের উপর চেপে বসা জগদ্দল পাথর স্বৈরাচারী রেজিম ফেরাউনকে উৎখাত করে এই জাতির উপর মহান নেয়ামত দান করেছেন। মুক্ত বাতাসে আমাদের নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ দান করেছেন। তিনি আজ শুক্রবার ( ১৪ মার্চ, ১৩ রমজান) বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আয়োজিত ইফতার মাহফিলে উপস্থিত আমন্ত্রিত মেহমানদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্য রাখছিলেন । রাজধানীর পল্টনস্থ ফার্স হোটেল এন্ড রিসোর্টসে রাজনীতিবিদ, কূটনীতিবিদ, উলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্টজনদের সম্মানে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে আগত অতিথিবৃন্দকে স্বাগত জানিয়ে পরিচয় করিয়ে দেন দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ। ইফতার মাহফিলে মাওলানা মামুনুল হক আরও বলেন, একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপর আমরা আস্থা রাখতে চাচ্ছি। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের আগামী বিনির্মাণের লক্ষ্যে সংস্কারের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যে উদ্যোগকে দলমত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক পক্ষ স্বাগত জানিয়েছে এবং এখনো পর্যন্ত সকলেই সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সংবিধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে আমরা আশা করছি আগামী বাংলাদেশে বহুদল ও মতের সম্মিলনে একটি সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে ওঠবে। মাওলানা মামুনুল হক ২০০৯ সালের পিলখানা ট্রাজেডিতে ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তার শাহাদাত, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে শাহাদাত বরণ কারী হেফাজতে ইসলামের বীর তৌহিদী জনতা, ২০১৪-১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনে শাহাদাত বরণকারী অসংখ্য রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের কুখ্যাত মুসলিমঘাতক নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে কেন্দ্র করে সরকারী বাহিনীর সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হেফাজতে ইসলামের ২৫ জন বীর শহীদান ও সর্বশেষ ২০২৪ এ শাহাদাত বরণ করা অসংখ্য বীর শহীদানের মাগফেরাত কামনা করেন। মাওলানা মামুনুল হক বলেন, আজকে বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে এমন অবস্থানে এসে উপনীত হয়েছে, আমরা আশাবাদী সম্মিলিতভাবে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। তবে সর্বত্রই একটি আশংকা তাড়া করে বেড়াচ্ছে না জানি, পরাজিত শক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়ে যায়। একটি বিষয়ে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক পক্ষকে একমত হওয়ার আহ্বান জানাই যে, এইসময়ে আমরা লক্ষ্য করছি, বাংলাদেশে অনেক সংকট আছে। তারপরও একধরণের স্বস্তির আবহ সৃষ্টি হয়েছে। এই রমজানে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীনতা রোধ করা রয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশে লোডসেটিং একেবারে কম হচ্ছে। সেইসাথে আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি বিষয়ে আমাদের সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে আমাদের দেশকে পুনর্গঠনের যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হতে চাই। সেক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা অবস্থা হলো, পুলিশ প্রশাসন এখনো সম্পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে মাঠে কাজ করছে, সে কথা বলার সময় এখনো হয়নি। মাওলানা মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। এদেশের জনগণ ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ। এদেশে ইসলামের জন্য অবমাননাকর কোনো বিষয়কে মানুষ মেনে নেবে না। বাংলাদেশ কখনই কোনো ইসলামবিরোধী কোনো কালচারকে মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে, সভ্য নাগরিকদের দেশ হিসেবে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে মেনে নিতে পারে না। ইতোমধ্যে একজন রূপান্তরিত পুরুষকে অদম্য নারী হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা দিয়ে বাংলাদেশের কৃষ্টি কালচারকে অবমাননা করা হয়েছে। সেখান থেকে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ আমাদের কপালে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোনো উন্নত ও স্থিতিশীল রাষ্ট্রে মানবাধিকার অফিস কেউ করতে দেয়নি। আমেরিকা ও দেয়নি ভারতও দেয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যদি কেউ এই বাংলাদেশ বিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত হয় বাংলাদেশের মানুষ তাকে কঠোর হস্তে দমন করবে। শিশু আসিয়াসহ সকল ধর্ষণকান্ডের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, আইনের অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে। অনেক ছোট খাটো বিষয়কে এইসব আইনের সাথে গুলিয়ে ফেলে কঠোরতর অপরাধকে হালকা করে ফেলা হচ্ছে। নারী শিশু ও সমাজের দুর্বল মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশের আমীর ডা. শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমীর ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী, এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, এবি পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মুফতী মনীর হোসাইন কাসেমী, হাব'র সহ সভাপতি মাওলানা নূর মুহাম্মাদ, মাওলানা রেজাউল করীম আবরার, মাওলানা রুহুল আমীন সাদী প্রমুখ। কূটনৈতিকদের মধ্যে চীন, ইরান, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান হাইকমিশনের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে আরো উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, নায়েবে আমীর মাওলানা রেজাউল করীম জালালী, মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা হেলালুদ্দীন, মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা কুরবান আলী কাসেমী, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা আব্দুল আজীজ, মুফতি শরাফত হোসাইন, খেলাফত যুব মজলিস সভাপতি জাহিদুজ্জামান, খেলাফত ছাত্র মজলিস সভাপতি আব্দুল আজীজ, খেলাফত শ্রমিক মজলিস সভাপতিসহ কেন্দীয়, মহানগর ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।